শিরোনাম: |
লালমোহন-তজুমদ্দিনে মেঘনার ভাঙনরোধে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ
|
লালমোহন (ভোলা) সংবাদদাতা : দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মযজ্ঞ পুরোদমে চলছে। ভাঙনরোধের এ দৃশ্য দেখে বেজায় খুশি নদী পাড়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন তত্পরতা চলমান থাকলে মেঘনার ভাঙন বন্ধ হবে এমন আশায় বুক বাঁধছেন এ দুটি উপজেলার বাসিন্দারা- যারা ৩ যুগে সারি সারি নারিকেল-সুপারির বাগান, জমিদারি পুকুর ও বিশাল আয়তকার চাষের জমি হারিয়েছেন।
সরেজমিন ভাঙনকবলিত লালমোহন উপজেলার কামারের খাল ও কুণ্ডের হাওলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেক বাস্তুহারা মানুষ বেড়িবাঁধের পাশে ঘর নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসব বাসিন্দার অনেকেরই বসতভিটা জায়গা-জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। তারা এখন মাথা-গোঁজার ঠাঁই করতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। এসব বাসিন্দার মাঝে নদী ভাঙনের কোনো শঙ্কা নেই। মেঘনাপাড়ের বাসিন্দা আলমগীর দালাল জানান, সরকারের এ মেয়াদে যেভাবে ভাঙন ঠেকানের কাজ চলছে, তা যদি আগে থেকে চলতো তাহলে বাপ-দাদার ভিটা-মাটি হারাতে হতো না। মেঘনার ভাঙনে সব হারানো ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ইউনিয়নে তার বাপ-দাদার জমিদারি ছিল। কিন্তু উত্তাল মেঘনার জলরাশি সেই ইউনিয়নটি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সব হারিয়ে লালমোহনের কলেজপাড়া এলাকায় ঠাঁই হয়েছে। ইদ্রিস হাওলাদার আরও বলেন, শুধু মলংচরাই নয়, পাশের সোনাপুর ইউনিয়নটিও ভোলার মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন আছে শুধু নামে। ভোটার আছে, ভোটও হয়। কিন্তু ভুখণ্ডগতভাবে দুটি ইউনিয়নের কোনো অস্তিত্ব নেই। কয়েক বছর হলো মেঘনা নদীর বুকে চর জেগেছে। চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মেল নামে দুটি চরে নদীভাঙা অনেক মানুষ ঠাঁই নিয়েছে। সেখানে দুটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ভোট নেয়া হয় । ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আহমেদ জানান, শুধু লালমোহন ও তজুমদ্দিন নয়, পুরো ভোলাকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। মেঘনা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষাসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী দু-চার বছর পর ভোলার নদী ভাঙন সমস্যা আর থাকবে না। তিনি জানান, মেঘনার ভাঙনের মুখেপড়ে লালমোহন উপজেলার কামারের খাল থেকে কুণ্ডের পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ এলাকার অতিঝুঁকিপূর্ণ অংশ রক্ষার জন্য ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেসার্স বিজে টেক্সটাইল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ এবং ব্লক দ্বারা নদীর তীর ও বাঁধের ঢাল সংরক্ষণে কাজ চলছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে চলতি ১৭ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের ২ বছরের কাজে ভাঙনরোধে আশানুরুপ ফল পাওয়া গেছে। লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ও ধলীগৌরনগরের আংশিক ৩ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য নতুন একটি প্রস্তবনা দেয়া হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এ বরাদ্দ পেলে লালমোহন উপজেলায় নদী ভাঙন থাকবে না। এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর, চাঁদপুর ও চাচড়া ইউনিয়নকে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য অচিরেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে। ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ৩টি ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার এলাকা সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশের প্রথম শ্রেণির ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালীর কেকে এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আবুল কালাম আজাদ, ফরিদপুরের মেসার্স শাহিন আহমেদ, চাঁদপুরের এএইচ ট্রেডিং করপোরেশন এবং কুষ্টিয়ার ন্যাশনাল টেকনোলজি। এসব প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙন প্রতিরোধ কাজে অনেক অভিজ্ঞ। ৪৫০ কোটি টাকার বিশাল এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তজুমদ্দিন উপজেলাকেও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, এ দুটি উপজেলার বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন। ২০১০ সালে এ আসন থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়ে মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে রীতিমতো যুদ্ধ করে চলেছেন। সংসদ অধিবেশন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে গেছেন, যেখানেই নদী ভাঙন রোধের প্রকল্প গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয় দিয়ে তার আলোচনা শুরু হয়েছে। শাওন বলেন, ভূমি না থাকলে জনগণ বাঁচবে না। এ দুটি উপজেলাকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছেন। |