শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ওষুধশিল্পে সম্ভাবনা, মেধাস্বত্ব প্রাপ্তি মান ও দাম প্রসঙ্গে কিছু কথা
Published : Saturday, 14 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 988

মোতাহার হোসেন : বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দেশের ওষুধশিল্প। ইতোমধ্যে ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বও পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে রফতানি সম্ভাবনাসহ ওষুধের কাঁচামাল আমদানির পরিবর্তে রফতানির সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এই শিল্পে জড়িত শিল্প উদ্যোক্তা ছাড়াও সরকারি মহলও নতুন করে আশার আলো দেখছেন এ শিল্পকে ঘিরে। পত্রিকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব অর্জন শুধু এই শিল্পে জড়িতদের জন্যই নয় একই সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একটি অন্যতম বড় অর্জন। বছরব্যাপী নিত্যপণ্যমূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখা ছিল সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে শুধু চিনি, সয়াবিন তেল ছাড়া অন্যসব পণ্যমূল্য স্থিতিশীল ছিল। এতে ভোক্তাসাধারণ কিছুটা হলেও ভালো ছিল। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় সাফল্য হচ্ছে, ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব অর্জন। এখন প্রয়োজন মানসম্মত ওষুধ উত্পাদন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা।
প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো (এলডিসি) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় পেয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ সুবিধা কার্যকর হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ মেধাস্বত্বের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনাবেচা করতে পারবে। এ সুবিধা না পেলে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানির বাজার হারাতো এবং দেশে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের দাম বাড়ত। এতে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ ওষুধ ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতেন। তাই ২০১৬ সালে সরকারের প্রচেষ্টায় ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়াকে বড় অর্জন বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) কাউন্সিল স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো জন্য ‘সর্বোচ্চ ছাড়’ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ১৫-১৮ ডিসেম্বর নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে দ্বিতীয় মেয়াদে মেধাস্বত্ব ছাড়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে ২০০১ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় ট্রিপস সমঝোতা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিশেষ সুবিধার মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ প্রায় ২৫০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণ করেছে। আর ৩০টির বেশি কোম্পানি ১০৭টি দেশে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ রফতানি করছে। ১৬ কোটি মানুষের জন্য ৯৭ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে বাংলাদেশ। বিদায়ী বছরে রফতানিতেও বড় ধরনের অর্জন রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ১,৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি আয়ের তুলনায় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এদিকে একক মাস হিসেবে নভেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের রফতানি খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪২৪ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। অর্থাত্ রফতানি আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ রফতানি খাত থেকে আয় করেছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছর রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ আয় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন ডলার হবে।
চলতি বছর যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের (আরজেএসসি) ওয়েবসাইট জাতীয় ই-তথ্যকোষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এর ফলে যে কোনো গ্রাহক ঘরে বসেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। আর এক ঘণ্টাতেই নামের ছাড়পত্র নেয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে টাকা পরিশোধ করা যাবে। আরজেএসসিতে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে, নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ইউজার আইডি ব্যবস্থাপনায় নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনে আবেদন বা দলিলপত্র দাখিল করা সহজ হবে। নিরাপদ ও আগের পদ্ধতির সমস্যাগুলো দূর হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ইউজার আইডি প্রদান করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে নতুন পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক আইডি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাডমিন আইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিদায়ী বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। দাম স্থিতিশীল থাকায় বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন পার্বণগুলোতে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়েনি। বাজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ছিল। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো প্রকার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল প্রত্যাহিক পরীক্ষণ করেছে। আর আপত্কালীন সরকার টিসিবির মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করে তা সুলভমূল্যে বাজারে বিক্রি করছে। সারাবছর বাজারে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখাকে অন্যতম একটি অর্জন বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকায় বলা হয়, ‘ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব প্রাপ্তি বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সুবিধা আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এত বছর বাড়ানো হয়েছে। ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এত বছর বাড়ানো হয়। এটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এটা না হলে দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে ওষুধ ক্রয় করতে পারতেন না। তিনি বলেন, ‘আশা করছি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নির্ধারিত রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এটা আমাদের আরেকটি বড় অর্জন হবে। আর আমরা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পারাটা ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এতে সরকারি মহল সতর্ক থাকায় এবং কঠোর পদক্ষেপের কারণে পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন পার্বণগুলোতে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। একই সঙ্গে এ বছর আরজেএসসি অটোমেটেড হয়েছে। এখন এক ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো রেজিস্ট্রেশন করে যায়। সার্বিক বিবেচনায় অনেক অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৬ বছরটি পার করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে প্রত্যাশা থাকবে নিত্যপণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বছরব্যাপী মাঠে থাকবে এবং বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখবে। তবেই জনভোগান্তি দূর হবে। মানুষ স্বস্তিতে থাকবেন। তাছাড়া ওষুধের ব্যবহার, মান, দাম প্রভৃতি নির্ধারণে উদ্যোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি।

লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক [email protected]



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft