সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রাজপথ ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছে বিএনপি
Published : Tuesday, 10 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 838

* বিএনপিতে থিংক ট্যাংক সংকট
*  সংবাদ সম্মেলন ও প্রেস রিলিজই ভরসা
* তৃলমুল বাড়ছে ক্ষোভ

এম.উমর ফারুক : বিএনপিতে থিংক ট্যাংকের সংকট চলছে। দলের থিংক ট্যাংক হিসাবে যারা এতদিন কৌশল নির্ধারণ ও উপদেশ দিতেন তারা এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। তাছাড়া দলের নেই কোন রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনাও। সরকার বিরোধী কোন ইস্যুই তারা কাজে লাগাতে পারেনি। শুধু দলীয় কার্যালয়ে বসে সংবাদ সম্মেলন আর প্রেস রিলিজ দিয়েই চলছে বিএনপির কর্মকান্ড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজপথের কর্মসূচি এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছে দলটি। এমনিতেই দলের চেয়ারপারসন ও মহাসচিবসহ প্রায় সব কেন্দ্রীয় এবং শত শত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে মামলা সামাল দিতেই হিমসিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় দলের হাই কমান্ড চায় না আবার সংঘর্ষ এবং নতুন মামলায় জড়িয়ে পরতে। এ জন্যই দু’একটি কর্মসূচি রাজপথে পালনের চেস্টা করলেও বাধা উপেক্ষা করে মাঠে নামতেই যায়নি বা পারেনি তারা। ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ৭ জানুয়ারী সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। কেন্দ্রীয়  পর্যায়ে কর্মসূচি সফল করতে না পাড়ায় দলের হাইকমান্ডের প্রতি  তৃণমূল নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বাড়ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি ঘিরে রাজপথে নামার চেন্টা করেছিল বিএনপি। এজন্য ৭ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি চায় তারা। কিন্তু অনুমতি পেয়ে সমাবেশ করতে পারেনি। দেখাতে পারেনি শোডাউন। এর আগে গত ৭ নভেম্বর দলটি ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ দিবসের কর্মসূচিও  করতে পারেনি। একেবারেই শেষ মুহূর্তে অনুমতি পায় সমাবেশের। তাই আপাতত রাজপথ এড়িয়ে বিএনপির পুরো মনোযোগ নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও শক্তিশালী করে প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তুলতে সরকার কি উদ্যোগ নেয় তার প্রতি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ন কর্মসূচি পালনের জন্য চেস্টা করেছে। কিন্তু সরকার বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। গণতান্ত্রিক সরকার হলে বিরোধীমতে কর্মসূচিতে বাধা দিত না। তিনি বলেন, কর্মসূচি নিয়ে তুনমূল নেতাদের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে, তবে সেটা দলের প্রতি নয়, সরকারের প্রতি। কেননা তৃনমূল নেতারা জানেন কর্মসূচিতে বাধা দল নয়, বাধা দিচ্ছে সরকার। তবে আমরা আশা করবো সরকার গণতান্ত্রিক হবে।
এবিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার নানাভাবে দলটিকে উস্কানি দিচ্ছে। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে রাজপথে কোনো সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। যদি দলটি রাজপথে নামে তাহলে সরকারের এধরনের চেষ্টা হিতে বিপরীত বা বুমেরাং হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার সরকার গঠন করে বিএনপি। ২০০৬ সাল থেকে প্রায় একদশক ধরে বিএনপি অফিস পূর্নাঙ্গভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। যেকোন কর্মসূচি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলটির নেতারা বিশ্বাস করেন, সরকারের অনমনীয় অবস্থান মোকাবেলা করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামলে সরকার এর সুযোগ নেবে। নির্বাচন কমিশন সংস্কার থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সমর্থ হবে।
সূত্রমতে, রাজপথে কোনো সমাবেশ করা অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি ধীরে চল নীতি নিয়েছে। এধরনের পরিস্থিতিতে কঠোর কর্মসূচি দিলে নির্বাচন কমিশন সংস্থার ও শক্তিশালী করার যে উদ্যোগ দলটি নিয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কোনো কঠিন কর্মসূচি দিতে চাচ্ছি না দলটি। গত বছর বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও শক্তিশালী করতে প্রস্তাব দেন। বিএনপির নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সংলাপ করেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই দাবিতে সংলাপ করেছন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। আলোচনা ও দরকষাকষির মাধ্যমেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান চায় বিএনপি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এছাড়া আর অন্য কোনো সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশনও জরুরি বলে তিনি অভিমত দেন।
সূত্রমতে, বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে এতোদিনে যাদের পরিচিতি ছিল সামপ্রতিক সময়ে দলটির সঙ্গে কার্যত তাদের দূরত্ব বাড়ছে। বিমিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. মোস্তাহিদুর রহমান, ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ফরহাদ মাজহার, শফিক রেহমান বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত থাকলেও নানা কারণে বেশ কিছুদিন যাবত তারা নীরব রয়েছেন। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগে মতো তাদের দেখাও মিলছে না। আগে যারা দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বিএনপির ক্ষেত্রে এখন তাদের ভূমিকা কী জানতে চাইলে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ ওইভাবে চিন্তা করার বয়স এখন আমার নেই। রাজনৈতিকভাবে যেটা সঠিক মনে করি সেটা বলবো। বিএনপির পক্ষে গেলেও বলব, বিপক্ষে গেলেও বলব।
সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াত ইস্যূতে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর ড. মাহফুজ উল্লাহ, ড. মাহবুব উল্লাহ, সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক সদরুল আমিন দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে বিএনপির গবেষণা সেলের অনুমোদন রয়েছে ওই সেলে পেশাদার লোকরা বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে অদৃশ্যভাবে কাজ করছেন। রামপাল ইস্যু, নির্বাচন কমিশন গঠন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ইস্যূতে বিএনপির থিংক ট্যাংক কাজ করেছে এবং দলের নেতারা তা তদারকি করছেন।
জামায়াত ইস্যূতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদসহ একটি অংশের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পর কারা এখন বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, তা তো বলতে পারব না, আমরা সরাসরি রাজনীতি করি, আমরা ছাড়া থিংক ট্যাংক কে? যারা কোয়ালিফাইড শিক্ষিত, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তারাই তো থিংক ট্যাংক। আবার আলাদা থিংক ট্যাংক আছে নাকি?



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft