রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দক্ষ জনবল সঙ্কটেও লাভের মুখে যমুনা সার কারখানা
Published : Monday, 9 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 730

জামালপুর প্রতিনিধি  : দক্ষ জনবল সঙ্কটের মুখেও জামালপুরে অবস্থিত যমুনা সার কারখানার উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছে কারখানাটি। উত্পাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে দক্ষ জনবল সঙ্কটেও রয়েছে বলে জানা গেছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) এর অত্যাধুনিক উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন এশিয়া মহাদেশের অন্যতম দানাদার ইউরিয়া সার উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড। এটি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে যমুনা নদীর পূর্ব তীরে প্রায় ২শ’ একর ভূমির ওপর অবস্থিত। কারখানাটি জাপানের মিটসুবিশি হেভী ইন্ডাস্ট্রিজ লি. নির্মাণ করে।
চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক এবং ১৯৯২ সালে ১ জুলাই থেকে দৈনিক ১৭শ’ টন ইউরিয়া সার ও বছরে ৫ লাখ ৬১ হাজার টন সার এবং দৈনিক ১০৭৮ টন ও বছরে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪০ টন অ্যামোনিয়া উত্পাদন ক্ষমতা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদন শুরু করে কারখানাটি। কারখানার উত্পাদিত সার ১৯৯২ সালে প্রতিটন বিক্রয় মূল্য ৪ হাজার ৮শ’ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে কারখানার উত্পাদিত সারের বাজার মূল্য সরকারি সিদ্ধান্তে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করলে লাভের মুখ দেখে কারখানাটি। কারখানাটিতে কর্মরত রয়েছে- ৮৯৪ ও পে-রোল /লিয়েন/ পি আর এল ১৯ সহ সর্বমোট ৯১৩ জন। এ ছাড়াও কর্মক্ষম হয়েছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
জেএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছর গ্যাস সঙ্কটে সার উত্পাদন ব্যাহত হয়। এক পর্যায়ে সরকারি সিদ্ধান্তে  গ্যাস প্রত্যাহার ও গ্যাসের চাপ কম থাকায় এবং যান্ত্রিক ত্রুটিতে ১৯২ দিন কারখানার উত্পাদন বন্ধ থাকে। অবশিষ্ট ১৭৩ দিন গ্যাসের চাপ কম থাকার ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার টন এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার টন। গ্যাস স্বল্পতায় উত্পাদন হয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৭ টন। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম দিকে গ্যাস সঙ্কটে উত্পাদন প্রায় দুইমাস বন্ধ থাকে। পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী নির্দেশনায় ওই অর্থবছরের পরবর্তী ১০ মাসে এ কারখানায় লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৩৫ হাজার টনের স্থলে তিন লাখ ২৭ হাজার ৫১২ টন ইউরিয়া সার উত্পাদিত হয়। যা ৯২ হাজার ৫১২ টন বেশি। এর বাজার মূল্য প্রতিটন ১৮ হাজার টাকা দরে ১৬৬ কোটি ৫২ লাখ ১৬ হাজার টাকা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার টন, অর্জিত হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৭ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৩ টন। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ অর্জিত হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার ৩০৯ টন। কম উত্পাদন হয় ৪৯ হাজার ৬৯১ টন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখের স্থলে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৭ টন যা ৭৪ হাজার ৭৭৭ টন বেশি উত্পাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রতিটন ১৪ হাজার টাকা দরে ১০৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫০ হাজারের স্থলে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭০২ টন বেশি ৭ হাজার ৭০২ টন উত্পাদন হয়। যার বাজার মূল্য ১০ কোটি ৭৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা বেশি মুনাফা অর্জন করা হয়। সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানার উত্পাদিত মোট সারের মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার ২৩৫ টন সার ইতোমধ্যেই বিক্রি করা হয়েছে। এতে আয় হয় ৩২২ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ সার কারখানায় বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ৪৫০ টন সার উত্পাদিত হচ্ছে। আরও জানা গেছে, কারখানার উত্পাদিত সার কারখানার আবাসিক কলোনিতে ও বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে ত্রিপাল দিয়ে স্তূপ করে ঢেকে রাখা হয়। যার ফলে সার নষ্ট হওয়া এবং কারখানার পরিবহন খরচ প্রতিরোধে গুদাম স্থাপন করা জরুরি বলে দাবি করেন অনেকেই।
কারখানার উত্পাদন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু, নিরবচ্ছিন্নভাবে চালুর জন্য দক্ষ প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ রয়েছে। এসব দক্ষ প্রকৌশলীদের বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় বেশি বেতনের আশায় তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান। ফলে কারখানার লোড ৮০% থেকে ৫৫% উঠা নামায় সার্বক্ষণিক প্ল্যান্ট মনিটরিং এবং অ্যাডজাস্টম্যান্ট করার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া এমটিএস বিভাগের বিভিন্ন শাখায় নির্ধারিত সংখ্যক প্রকৌশলী নেই। তাই রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সমস্যা সৃষ্টি হয়। যার ফলে উত্পাদনে প্রভাব পড়ে। বর্তমানে টেকনিক্যাল ক্যাডারভুক্ত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অনুমোদিত ১৮৭ জনের স্থলে রয়েছে ১৪৩ জন। টেকনিক্যাল ক্যাডারভুক্ত ৪৪ জন কর্মকর্তা কম থাকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারখানা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জ্যোতিষ চন্দ্র রায় জানান, যমুনা সার কারখানায় ন্যাচারাল গ্যাস বুস্টার কমপ্রেসার স্থাপন করা হয়েছে। কারখানার সার উত্পাদনে চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে, অন্যথায় উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। মূলত যমুনা সার কারখানার উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কারখানা লাভের দিকে ধাবিত হয়েছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft