শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি নিয়ে বিপর্যস্থ ছাত্রদল
Published : Friday, 30 December, 2016 at 6:00 AM, Count : 959


•    ত্যাগী ও সক্রিয় নেতারা হতাশ
•    নতুন কমিটির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
•    কবে নতুন কমিটি হবে-কেউ জানে না




এম.উমর ফারুক :
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল রোববার। গত ১৪ অক্টোবর ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ন এ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘিরে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ছাত্রদল। দাবি আমলে না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারি ছাত্রনেতারা। দিবসটি উপলক্ষে চমক কিছু না থাকলেও দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
সূত্র মতে, বিএনপির মতো ঝিমিয়ে রয়েছে নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এ সহযোগী সংগঠনটির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। কিন্তু কবে-কিভাবে নেতৃত্ব বাছাই করা হবে, নতুন কমিটি গঠন করা হবে- তা নিয়ে পুরো অন্ধকারে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এদিকে নতুন কমিটি গঠন করা হবে এমন প্রত্যাশায় নিজেদের পাল্লা ভারি করতে শোডাউন-মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে আবার অনেকে রয়েছেন মৌসুমি নেতা। যারা আন্দোলন কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করেও শীর্ষ পদ পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন পুরোদমে। তাদের দেখাদেখি রাজপথের নেতারাও নিজেদের কাঙ্খিত পদ-পদবী বুঝে নিতে সরব হয়ে উঠেছেন। নিজেদের আমলনামার ফর্দ তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নেতাদের দ্বারে-দ্বারে। তবে পদ-পদবীর প্রাপ্তিতে এখনও তারা সন্দিহান। কোট-টাই পড়া ফেসবুক নির্ভর নেতারাই আবার দায়িত্ব পাচ্ছেন, না-কি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দল ও জিয়া পরিবারের নির্দেশনায় রাজপথে লড়াই করেছেন তারা নেতৃত্ব পাচ্ছেন তা নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দুই বছর মেয়াদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৪ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। কিন্তু ২০১৫ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫৩ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রনেতা সক্রিয় ছিলেন। এর বাইরে পদ-পদবীবিহীন অনেক ছাত্রনেতার ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য। আর ৭৩৪ জনের মধ্যেও ওই কয়েকজন ছাড়া বাকিরা রয়ে গেছেন আড়ালেই। তবে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতায় তারাও দাবিদার হয়ে মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন।
ছাত্রদল কমিটির গঠনের সঙ্গে জড়িত এমন একজন জানান, এবারের মতো এত নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা আগে কখনো ছিলো না। যে ছাত্রটি মেধায়, দক্ষতায় কর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না- সেও এবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সুপার ফাইভে থাকতে চাচ্ছেন। একটি রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা ভালো। কিন্তু যার যোগ্যতা নাই, রাজনৈতিক দক্ষতা নাই সে কিভাবে নেতা হবেন। তিনি বলেন, অনেক ছাত্রনেতা রাজনৈতিক শিক্ষা পর্যন্ত গ্রহণ করেন না। অনেকে তো বিএনপির ১৯ দফা কর্মসূচিও জানেন না। এরপরও দৌড়ঝাঁপ করছেন, যোগ্যদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এসবের মধ্যেও সংগঠনের পরবর্তি কমিটি নিয়ে কাজ চলছে। খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। জটিলতার মধ্যেও নতুন কমিটি গঠন হবে বলেও তিনি আশাবাদি।
ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী একজন ছাত্রনেতা জানান, বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের আন্দোলনে সফলতার দাবিদার হলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ। এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের সভাপতি রাজিব আহসান নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে প্রত্যয়ী। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান আগামী জাতীয় নির্বাচনে নরসিংদী জেলা থেকে নির্বাচন করার যাবতীয় প্রস্ততি গ্রহণ করেছেন। ওই দু’জন ছাড়াও সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন অর রশিদ কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হয়েছেন। তাই নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় তারা তেমন না থাকলেও অন্যরা পিছিয়ে নাই।
একাধিক ছাত্রনেতা বলেন, বিএনপির মধ্যে একমাত্র ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় ঘনিয়ে আসলেই সিনিয়র-জুনিয়র, বিবাহিত-অবিবাহিত, সংস্কারপন্থি আর আঞ্চলিকতার অজুহাত সামনে তুলে আনেন এক শ্রেণীর তল্পীবাহক। তারা নিজেদের আজ্ঞাবহ কমিটি গঠনের জন্যই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের খোলস পরিবর্তন করেন। আর ওই সকল যুক্তি সামনে তুলে এনে যোগ্যদেরকে আড়াল করে দেন।
নতুন কমিটি গঠনের মূল কাজ করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির বেশ কয়েকজন নেতা এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে— এমন খবরের পরপরই পদপ্রত্যাশীরা লবিং শুরু করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন শীর্ষ ও প্রভাবশালী নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীরা। কেউ কেউ লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজর কাড়ারও চেষ্টা করছেন। তারা নিজেদের বায়োডাটা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে যাদের নাম জোরে-সোরে শোনা যাচ্ছেন তারা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু। সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারও রয়েছেন। এছাড়া যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে মিয়া রাসেল, বায়েজিদ আরেফিন, কাজী মোকতার হোসেন, ওমর ফারুক মুন্না প্রমুখ। এদের মধ্যে সকলেই রাজপথে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে ২০১৪ আর ২০১৫ সালের আন্দোলনে আলমগীর হাসান সোহান, নামজুল হাসান, ইখতিয়ার রহমান কবির ও ইসহাক সরকারের ভূমিকা ছিলো উল্লেখযোগ্য। কাজী মোকতার হোসেন আন্দোলন সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে রাজপথে ছিলেন। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন- যুগ্ম সম্পাদক করিম সরকার, মির্জা ইয়াসিন আলি, মো. গোলাম মোস্তফা, মেহবুব মাসুম শান্ত, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া ও সহ সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ। ঢাবির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা ওয়ান ইলেভেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর সেনা এ্যাকশনের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন।  
এদিকে, নতুন কমিটির দাবিতে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে বিক্ষোভের ২য় দিন গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বায়েজীদ আরেফীন। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কার্যালয়ের পাশে হোটেল ভিক্টোরির সামনে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পরই ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ কার্যালয় থেকে নিচে নেমে এলে বায়েজীদ আরেফীনের সমর্থকরা তাকে মারার জন্য ধাওয়া দিলে মোটরবাইকে উল্টো পথে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন সোহাগ। যানজট থাকায় পরে বাইক রেখেই নিরাপদে চলে যান তিনি।  এই উত্তেজনা শুরু হয় সোমবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের বক্তব্যে। নতুন কমিটি গঠন, চলতি কমিটি না ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে তিনি হাইকমান্ডকে জানানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে সংগঠনের ৫০জনের বেশি নেতাকর্মী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft