শিরোনাম: |
মুক্তিযুদ্ধ
|
রফিকুল ইসলাম রতন : টা-টা-ঠাস্-ঠাস্-গুম্। একটানা গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ। চারদিকের মানুষ ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবক-সবাই দৌড়াচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধ ও গেরিলা আক্রমণের মুখে পাকসেনারা পাগলের মতো দিগ্বিদিক গুলি চালাচ্ছে। সাক্ষাত্ মৃত্যুর হাতছানি থেকে বাঁচার জন্য সবার সঙ্গে শিশু তন্ময়ও দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে এক সময় হাঁপিয়ে ওঠে। পেছনে ফিরে দেখে অসংখ্য মানুষের মিছিল। ভয়ে অন্তরাত্তা শুকিয়ে যায়। আবার সে দৌড়াতে শুরু করে। এক সময় উঁচু রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় সে। আর চলতে পারে না। কতইবা দৌড়াবে। ৮-৯ বছরের এই শিশুটি পরিবারের সবাইকে ছাড়া একাকী কি-ই বা করবে। হোঁচট খেয়ে ধুলোয় লুটোপুটি। হাঁপাতে হাঁপাতে এক সময় সে ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওর যেন কষ্টের শেষ নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কিছুই খায়নি। বাবার সঙ্গে ভাত রান্না শেষে মাছের তরকারি যখন রান্না হচ্ছিল তখনই শুরু হয় গোলাগুলি। সকালেই ওর বাবা ৫ টাকা দিয়ে অনেক তাজা মাছ কিনেছিল- ছেলেকে নিয়ে ভালো করে খাবে বলে। কিন্তু রান্না শেষ না হতেই গুলি এসে পড়তে থাকে ওদের বাড়ির আঙ্গিনায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ে চিত্কার দিয়ে দৌড় দেয় তন্ময়। ওর পেছনে পেছনে বৃদ্ধ বাবাও দৌড়াতে থাকেন। দৃশ্যটা একাত্তরের অক্টোবর মাসের। তন্ময় ওদের পরিবারের সবার ছোট ছেলে। পড়ে ক্লাস ফোরে। বড় ভাই রাজনীতি করার সুবাদে যুদ্ধের শুরুতেই ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি তখন বিএ ক্লাসের ছাত্র। মেজ ভাই এসএসসির ছাত্র হয়েও যোগ দিয়েছেন কাদেরিয়া বাহিনীতে। বাবা ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা। বাবা-মা তন্ময় ওর মেজ ও সেজ বোনকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল মধুপুরের ধনবাড়ী এলাকার বড়-বোনের গ্রামের বাড়িতে। বাবার সঙ্গে এ দন বাড়ি দেখতে এসেই পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর এই মুখোমুখি যুদ্ধের মুখে পড়ে তন্ময়। টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার নগরবাড়ী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী তালুকদার বাড়ির ছেলে সে। বাড়ির সামান্য দূরেই টাঙ্গাইল-ভূঞাপুর সড়ক। এই সড়ক থেকে একটি বড় রাস্তা তন্ময়দের বাড়ির সামনে দিয়ে নারান্দিয়া বাজার হয়ে গেছে অনেক দূরে। তন্ময়দের বাড়ি আর ভূঞাপুর সড়কের মাঝখানে মাটির রাস্তার পাশে ৪-৫ স্থানে বাংকার খুঁড়ে মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নিয়েছে। ওরা সবাই কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা। রাস্তার পশ্চিম দিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার খুঁড়ে অবস্থান নিয়েছে, একইভাবে রাস্তার পূর্ব দিকেও পজিশন নিয়েছে আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গোপন খবর ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫-৭টি সাঁজোয়াযান এ পথেই ভূঞাপুর যাবে। ওই সেনা বহরে পাঞ্জাবি, পাঠান ও বেলুচ রেজিমেন্টের অর্ধশতেরও বেশি জওয়ান রয়েছে। সঙ্গে আছে |