বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
বিমানের জরুরি অবতরণ যান্ত্রিক ত্রুটি মনুষ্য সৃষ্টও হতে পারে
Published : Saturday, 3 December, 2016 at 6:00 AM, Count : 976

বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তুর্কমেনিস্তানে জরুরি বিমান অবতরণের ঘটনায় তদন্ত চলছে। বিমানটি জরুরি অবতরণ যান্ত্রিক কারণে হতে পারে, মনুষ্য সৃষ্টও হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া রূপরেখা নিয়ে মতামত দেয়ার অভিপ্রায় নাই। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি বুঝবেন তিনি কি করবেন, বললেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপির প্রস্তাব দেয়ার আগে মানুষ পোড়ানোর অপরাধে, সম্পদহানির অপরাধে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।

গতকাল শনিবার গণভবনে হাঙ্গেরি সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিভিন্ন টকশোতে অনেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখতে পান। আপনি পান কি-না? সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর মধ্য নেই, মধ্য পার হয়ে গেছে। আমরা তিন বছর পার করছি। মধ্যবর্তী যদি বলেও থাকেন, সেটা পরবর্তীর বিষয়ে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন দেখা ভালো। সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি সফরের নানা দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাঙ্গেরি সফরের সময় তাকে বহনকারী বিমানের একটা যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল। দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখন বেঁচে আছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সপরিবারে হত্যা করা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় না, মন্ত্রী করা হয়, সেখানে আর কী বলব? ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে একটি দলের নেতাদের বক্তব্যগুলো শুনলে অনেক কিছুই বোঝা যায়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তদন্ত করা হচ্ছে, দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা বেঁচে আছি, আপনাদের সামনে আছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাই হোক, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। সহি-সালামতে ফিরে এসেছি। সবার দোয়া চাই। যে দেশে বঙ্গবন্ধুসহ আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হয়েছে, সে দেশে তাহলে কার জীবনটা নিরাপদ?

আলাদা বিমানে বিলাসিতার সময় আসেনি: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বিমান কেনার বিষয়টিও নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্য নতুন বিমান কেনার মতো বিলাসিতা করার সময় আসেনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গরিবের ঘোড়ারোগ বলা হয় না! ঘোড়া পালতেও অনেক খরচ, সেটা আমরা চাই না। সাধারণ মানুষ যেটাতে চড়ে, আমরাও সেটাতেই চড়ব। নির্দিষ্ট কারও জন্য নয়, যাত্রীদের জন্যই বিমানকে আধুনিকায়নের গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিমানের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন।

আগে ক্ষমা পরে ইসি গঠনের প্রস্তাব: বিএনপির নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য দেয়া প্রস্তাব নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির প্রস্তাব দেয়ার আগে মানুষ পোড়ানোর অপরাধে, সম্পদহানির অপরাধে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর ছেলে মারা গেছে দেখতে গিয়েছি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে ছোট গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে গেলাম সেটাও বন্ধ করে দিল। এ ধরনের অভদ্রতা যারা করে তারা কি প্রস্তাব দিল না দিল সে সম্পর্কে আমার মতামত কেন চান আপনারা।  শেখ হাসিনা বলেন, তারা যখন ক্ষমতা থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে তখন নির্বাচন নিয়ে কি খেলা তারা খেলেছে মনে রাখা উচিত। তাছাড়া বিএনপির নতুন প্রস্তাবের মাথা বা লেজের হিসাব পেয়েছেন কি-না জানি না। নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কর্মের কোনো মিল নাই জানিয়ে তিনি বলেন, ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। বিজয়ী হয়েছে। তখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা উঠালো না কেন? পক্ষে গেলে ভালো, বিপক্ষে গেলে মন্দ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নাই তারা জাতির জন্য কি করবে। তাদের প্রস্তাব নিয়ে তোলপাড় করার কি আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ওনার প্রস্তাব উনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে বলুক, তিনিই (রাষ্ট্রপতি) ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল নয়: মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসে বাংলাদেশে কেউ ঠাঁই পাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশে এসে কেউ আশ্রয় পাবে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, সেখানেতো মানুষ কষ্টে আছে। কিন্তু এই যে ৯ জন মানুষকে হত্যা করা হলো। আমি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদের বলে দিয়েছি, তাদের কেউ যদি বাংলাদশে ঢুকে থাকে তাহলে তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়।

সংসদের মূল নকশা লুই আই কানের নকশা নিয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থাপত্য শিল্পে এই নকশা একটি ইউনিক শিল্প। আমাদের যারা স্থাপত্য বিদ্যায় পড়াশোনা করেন তাদের কাছে এই নকশা একটি শেখার বিষয়। বিশ্বব্যাপী লুই আই কানের যেসব শিল্পকর্ম আছে আমাদের এই নকশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষনীয়। যারা সংসদ সচিবালয় ভিজিট করতে আসে তারা এই শিল্পকর্ম সম্পর্কে দেখতে চায়, জানতে চায়। তিনি বলেন, এই নকশা আনা হয়েছে এ জায়গাটাকে আরও সুন্দর করার জন্য। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণ সক্রান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না। তবে কীভাবে এ স্থাপত্য আরও সুন্দর করা যায় সে কারণেই নকশা নিয়ে আসা হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নকশা বহির্ভূত এমন একটি আলোচনা থাকলেও এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন স্টোর যেখানে মূল নকশায় সেখানটায় একটি পাবলিক অডিটরিয়ামের জায়গা ছিল। সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি যেখানটায় সেখানে মূল নকশায় ডি-১, ডি-২ স্পিকারের বাসভবনের জন্যে নির্ধারিত ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সে দেশের আভ্যন্তরীণ ঘটনা তবুও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সে দেশের কূটনীতিককে ডেকে কথা বলা হয়েছে। আমাদের বর্ডার গার্ডকে সতর্ক করা হয়েছে। তারা সতর্ক অবস্থায় আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটে যায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। তখন আশ্রয় না দিয়ে উপায় থাকে না- এটাও বাস্তবতা। তিনি বলেন, যারা এর জন্য দায়ী মাত্র কয়েকটি লোক মায়ানমার বর্ডার গার্ডকে হত্যা করল, সেনাবাহিনী গেল তাদেরও আক্রমণ করল। এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত। যারা প্রথমে সূত্রপাত করেছিল তাদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। তাদের ধরিয়ে দেয়া উচিত। তাদের কারণে হাজার হাজার নারী-পুরুষ কষ্ট পাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। সামান্য কয়েকটা লোকের জন্য হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে- এটা দুশ্চিন্তার কারণ। এসব ঘটনা কারা করছে বিশ্বব্যাপী আরও সচেতন হওয়া উচিত। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আরও সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছি যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যদি সবখানে আসে চিহ্নিত করে মিয়ানমারের বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। আসন্ন ভারত সফর নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর পানি বিষয়ে কথা হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft