শিরোনাম: |
ভবন পরিত্যক্ত, গাছতলায় পাঠদান
|
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে ১ হাজার ১১১টি স্কুলের মধ্যে ১৮০টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে গত ৫ বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৬টি স্কুল। বর্তমানে ১০টি স্কুল পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুকিপূর্ণ ও ১১টি বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। প্রায় ৫০ হাজার কোমলমতি শিশুর প্রাণহানির আশঙ্কায় পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, জেলায় ১ হাজার ১১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫০টি, ইসলামপুর উপজেলায় ৫১টি, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, সরিষাবাড়ী উপজেলায় ২২টি, বকশীগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ১৯টি ও মেলান্দহ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় পিংগলহাটি, হালুয়ারাজার চহট্ট, কম্পপুর ও জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বকশীগঞ্জ উপজেলার দত্তেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর উপজেলায় পশ্চিম কান্দারচর, ডেবরারচর, কাসিমার চর, গামারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ফাযিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় কবলিবাড়ী ও বাসুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট। উপায় না পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, খোলা আকাশের নিচে, গাছতলায় এবং পরিত্যক্ত ভবনের বারান্দায় শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেয়া দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ভবন ধসে জীবনহানির আশঙ্কা করছেন তারা। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার দত্তেরচর প্রথমিক বিদ্যালয়ের ২টি ভবন রয়েছে। এদের মধ্যে ১টি ১৯৯৩ ও অপরটি ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয়েছে। ভবন ২টির ৬টি শ্রেণি কক্ষ থাকলেও ২টি ভবনই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ২০০৯ সালে। ৫ বছর যাবত্ ওই স্কুলে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করলেও ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহনা জানায়, খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ও ঝুকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় ক্লাস করতে আমাদের কষ্ট হয় এবং ভয় করে। বৃষ্টি হলে আর ক্লাস হয় না। ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র তারেক জানান, ওয়ান থেকে খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছি, চার বছরে নতুন ঘরের মধ্যে ক্লাস করতে পারিনি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জানান, ৫ বছর আগে বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ব্যবস্থা না নেয়ায় লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। জামালপুর শহরের কম্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের ভীম ও কলামে ফাটল দেখা দেয়ায় গত বছর তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮টি কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু কক্ষ রয়েছে দুটি। তাই বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ভবনের নিচতলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। এছাড়াও শ্রেণি কক্ষ সঙ্কট তো রয়েছেই। পিডিইপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সালে নির্মিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনে এবং বারান্দায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এরপরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকে না শিক্ষার্থীরা। আতঙ্কগ্রস্ত অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। কম্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদা সুলতানা জানান, বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ার পর প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী কমে গেছে। পিংগলহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা একটি ভবন ২০১১ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর থেকে দেখা দিয়েছে শ্রেণি কক্ষ সঙ্কট। পরিত্যক্ত ভবনের বারান্দায় ও খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম চলছে। শিক্ষকদের মিলনায়তনও এ কক্ষটি। টিফিনের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের এ কক্ষে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা অন্য একটি ভবন থাকলেও মেঝে ভাঙা এবং বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে পাঠ্যবইসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভিজে যায়। পিংগলহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজভীন পালুয়ান জানান, শ্রেণি কক্ষ সঙ্কটে বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় আবার কোনো সময় গাছতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ এবং পরিত্যক্ত ভবনের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে চালাঘর নির্মাণের জন্য তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। |