সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
দোলা
Published : Thursday, 1 December, 2016 at 6:00 AM, Count : 889

মোফাজ্জল শাম্স : পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক দোলন পেশায় ছাত্র আবার পৈত্রিক পেশা, একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও কঠোর পরিশ্রমী একদিকে লেখাপড়া অন্যদিকে ব্যবসা ফুরসত নেই উদয়াস্ত পরিশ্রমী ব্যবসার প্রয়োজনে মাঝে মাঝে বিদেশেও যেতে হয় মিটিং লেগেই থাকে এভাবেই চলছিল দোলনের জীবন

গ্রীষ্মের দুপুর প্রচণ্ড গরম কার্জন হল চত্বরের কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল টুকটুকে ফুল ফুটেছে কোকিলের কুহুকুহু ডাক অলস দুপুরে ডিপার্টমেন্ট থেকে শহীদুল্লাহ হলে নিজ কক্ষে ফেরার জন্য হাঁটছে দোলন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সামনে থমকে দাঁড়াল সে সামনেই শহীদুল্লাহ হলের পুকুর শান বাঁধানো ঘাট মৃদু মন্দ বাতাসে পুকুরের বুক জুড়ে ছোট ছোট ঢেউ চাষ করা ঝাঁকে ঝাঁকে মাছের চলাফেরা পুকুর পারে তালগাছে বাবুই পাখির বাসা

এসব দেখতে দেখতে মনটা চলে গেল বাঞ্ছারামপুরের নিজ গ্রাম নবীনগরে মেঠোপথ পথের দুধারে ফসলী জমি নানা রকম ফসলে ভরপুর কাঁচা সড়কের পরেই বিল ঝোপঝাড় বিচিত্র রঙের প্রজাপতির আনাগোনা সাদা সাদা বকের ঝাঁক বর্ষায় বিল ভরা শাপলা শাপলা ফুলের সাদা-সাদা পাপড়ির মাঝে হলুদ রঙের পুষ্পদণ্ড ডাহুকের আনাগোনা ঘুঘুর ডাক নন্দিতার কথা মনে পড়ে গ্রামের স্কুলে একই সঙ্গে পড়ত নন্দিতা সনাতন ধর্মের কিশোরী মেয়ে মাথার দুপাশে দুটো বেনুনী দুলত হাটার ছন্দে দুষ্টুমি ভরা ডাগর ডাগর চোখ দুজনে পাঠকাঠিতে আঠা লাগিয়ে ফড়িং ধরত পূজা পার্বনে নতুন পোশাকে ঘুরে বেড়াত তারা ঈদ উত্সবেও হিন্দু মুসলমান এক সঙ্গে এসব উত্সব উদযাপন করত মিষ্টান্ন খেত এভাবে কত না সুন্দর দিন চলছিল সে সময় ছিল না এখনকার মতো হিংসা বিদ্বেষ মন্দিরে আগুন লাগানো প্রতিমা ভাঙচুর গ্রীষ্মে কাঁটার খোঁচা সহ্য করে বেতফল এনে দিত নন্দিতাকে কখনো বাঁশ ঝাড়ের বকের বাসা থেকে বকছানাও এনে দিত

হঠাত্ সস্বিত ফিরে পেল দোলন, হৈ চৈ শুনে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সামনে জটলা একটা বিষধর সাপ পালিয়েছে খাঁচা থেকে একে আটকাতে হবে নির্দেশ জারি হলো সাবধানে চলাফেরা করার জন্য সাপুড়ে আসছে দোলনের বন্ধু সংখ্যা খুবই কম কর্মব্যস্ততার জন্য যে দুএকজন বন্ধু আন্তরিক তাদের সঙ্গেও মিশা হয় না দীর্ঘদিন যাবত্

ভাবছে আজই একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে পরাগ আর পাশাকে নিয়ে আড্ডা দিবে গত সপ্তাহে মা ওদেরকে বাসায় ডেকে নিয়েছিল কি বলেছে তা জানতে হবে

সন্ধ্যের দিকে ঝির ঝিরে বাতাস বইছে তিন বন্ধু মিলিত হলো মগবাজার এর চাংপাই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বাটি ভরা গরম সাদা রঙের স্যুপ টমেটু সস মেশানোর পর সুন্দর রং ধারণ করেছে এর ফাঁকে আলাপ চারিতায় জানা গেল দোলনের মা তার বন্ধুদের দোলনের জন্য উপযুক্ত পাত্রী দেখতে বলেছে বলেছে দোলনের কোনো চয়েস আছে কি-না তাও দেখতে

পাত্রী খোঁজা শুরু হলো কার্জন হল ক্যাম্পাসে ঘুরে ফিরে পরাগ আর পাশা উদ্দেশ্য পাত্রী দেখা দিন শেষে দোলনকে পাত্রীর বর্ণনা দেয়া পরাগ আর পাশা একসঙ্গে টিএসসিতে আড্ডা দেয়া মচমচে সমুচা আর ধুমায়িত চা খাওয়ার ফাঁকে পাত্রী খোঁজে কোনো পাত্রীই পছন্দ হয় না এটা মেলতো ওটা মেলে না হাসিটা সেকেলে নয়তো দাঁত উঁচু চেহারায় লাবণ্যতা নেই একেবারে খসখসে মুখ কোনোটা বেঁটে আবার কোনোটা লম্বা পাটখড়ি চেহারা পছন্দ হলে শরীরের গড়ন পছন্দ হয় না ফ্যামেলি স্ট্যাটাস মিলে না সে এক মহা মুসিবত

-২-

দোলনকে পাশা প্রায়ই বলতো, তোর জন্য এত পরিশ্রম করি তুইতো আমাদের ভালো করে খাওয়াতে পারিস দোলন খাওয়াতো বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ফুচকা, চটপটি ক্যাম্পাসে দোলনকে দেখলেই পাশা চেঁচাত দোলন এক কাপ চা ক্যান্টিনে বসে বন্ধুরা একসঙ্গে মিলে চা খাওয়া পাশে চাঁনখার পুল বহু হোটেল বিচিত্র রকমের ভর্তার সমাহার সেখানেও খাওয়া দাওয়া, নিমতলী বাজার থেকে বাজার এনে রান্না করে খাওয়া পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্র আরও প্রসস্ত  হলো এবার আর্টস ফ্যাকাল্টি, রোকেয়া হল আর সামসুন্নাহার হলের চত্বর ঘন ঘন আসা যাওয়া দোলন ও আমাদের দিকে নজর দিল মাঝে মাঝে চাইনিজ খাওয়াত, টিএসসির কাফেটেরিয়ায় বিরিয়ানি খাওয়া হতো একত্রে বসে

উহকএন্ডে খালাম্মার (দোলনের মা) সাথে দেখা হতো পাত্রী খোঁজার অগ্রগতি জানাতাম পাত্রী পছন্দের পারদটা কিছুতেই তার কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারছে না হতাশ  হলাম না খুঁজতে খুঁজতে যখন হয়রান, তখন পেলাম এক শকুন্তলাকে জিওলজি বিভাগে পড়ে প্রাথমিক তথ্যে তা জানা গেল অনিন্দ সুন্দরী ঘন কাল চুল হাসিতে মুক্তা ঝরে টানাটানা চোখ দীর্ঘাঙ্গি চলার মধ্যে ছন্দ আছে মুখে দুষ্টুমি ভরা হাসি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল রঙের বাসে ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনা লাল রঙের  মাঝে সাদা হরফে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখা বাহারি নাম তরঙ্গ, চৈতালী, শাওন ইত্যাদি এসব বাস রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ছেড়ে কার্জন হল হয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করত এ বাসে চড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করত আমাদের নির্বাচন করা ছাত্রী তথা হবু পাত্রী নাম দোলা বাসে চড়তে হলে রেজিস্ট্রার  বিল্ডিং এর সংশ্লিষ্ট কাউন্টার থেকে বাস কার্ড কিনতে হতো দোলন বেশ কটা বাস কার্ড কিনে দিল দোলনের কিনে দেয়া বাস কার্ড পাঞ্চ করে দোলাকে ফলো করতে লাগল পাশা আর পরাগ  অবশেষে জানা গেল দোলার ডেস্টিনেশন, কাঁঠাল বাগান গোপনে দোলার বাসাও চেনা হলো সময় এগিয়ে চললো সম্মুখ দিকে দোলার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল চলল আড্ডা, চাইনিজ খাওয়া দু একদিন বলাকায় মেটিনো শো দেখা সুন্দরী আর মার্জিত মেয়ে দোলা প্রাণবন্ত হাসিতে মুক্তা ঝরে হালকা প্রসাধনীতেও অপূর্ব অপসরী এভাবেই চলতে লাগলো দিন পেরিয়ে মাস হঠাত্ একদিন দোলা নিমন্ত্রণ করল কাঁঠাল বাগানের বাসায় দোলন, পরাগ আর পাশাকে এ মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যই তো অপেক্ষা অবশেষে নির্ধারিত দিন চলে এল সাধ্যমতো সাজগোজ করে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হবে কিছু উপহার সামগ্রী আর শাঁখারী বাজার থেকে কয়েক গুচ্ছ ফুল আনা হলো সাথে বাঙালির প্রিয় হরেক রকমের মিষ্টি দোলার বাসা দোতালায় অপূর্ব সাজে সেজেছে দোলা তাদের ডাইনিং টেবিলে সাজানো হরেক পদের খাবার আভিজাত্য আর রুচিতে ভরপুর খাবার পালা শুরু হলো গভীর মমতার সাথে খাবার পরিবেশন করা হলো দোলা যেন স্বর্গের এক অপসরী গ্রাস গিলব না দোলাকে দেখবো?

খাওয়া তেমন হলো না তার পিড়াপিড়িতে কিছুটা খেতে হলো এবার পরিচিতির পালা দোলার মা, বাবা, ছোট ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা

এবার অপেক্ষার পালা শেষ করে আমাদের সামনে এলেন এক যুবক মেরুন রংয়ের শার্ট পড়া, পরনে মানান সই জুতো আর প্যান্ট বসলেন সোফার এক কোন ঘেষে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের আরাধ্য নায়িকা দোলা এরা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু সবাই  সদালাপী, হেলপফুল আমাদেরকে দেখিয়ে আঙ্গুল উঁচু করলেন আর উনি ইঙ্গিত- ওই যুবকের দিকে!

উনি আমার স্বামী !!!

বজ পাতের মতো হতবিহবল আমরা মনে হলো ৪৪০ ভোল্টের ধাক্কা

লেখক: জিএম ও চীফ ইনফরমেশন অফিসার, সোনালী ব্যাংক লি.



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft