শিরোনাম: |
তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
বাংলাদেশ-হাঙ্গেরি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
|
বর্তমান প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবনে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এমওইউ তিনটি হচ্ছে- বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা তথা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান উপস্থিত ছিলেন। পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রথম সমঝোতা স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেন হাঙ্গেরির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেন্ডর পিন্টার এবং বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংলাপ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেন হাঙ্গেরির অর্থনৈতিক কূটনীতিবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী লেভেন্তে ম্যাগইয়ার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। কৃষি খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেন হাঙ্গেরির কৃষিমন্ত্রী জসল্ট নেমেথ এবং বাংলাদেশের কৃষি সচিব মোহাম্মদ মইনুদ্দিন আবদুল্লাহ। এদিকে গতকাল স্যান্ডার প্যালেসে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধান হানোস আদেরের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহায়তার ধরনের বিষয়ে জানতে চান দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ কী করছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করছে তা জানতে চান আদেরে। বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি দুই থেকে আড়াই মিটার বৃদ্ধি পেলে দুই থেকে আড়াই কোটি নাগরিকের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটবে। জলবায়ু-দুর্গতদের জন্য নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আদেরের সহায়তা করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী ঋণ কিংবা আর্থিক সহায়তার চেয়ে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিনিময়ে জোর দেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা হলো, আমাদের সমস্যা, আমাদের নিজেদের সমাধান করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা কে কতটুকু করবে, ওই আশায় বসে থাকলে হবে না। বাংলাদেশের বন্যাপ্রবণ এলাকায় পানি শোধনের বিষয়ে নিজ দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট। শহীদুল হক বলেন, পিসিকালচার এবং অ্যাকুয়া কালচার-এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপতি প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বৃত্তির কথা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ঘোষণা করবেন বলে শেখ হাসিনাকে জানান জ্যানুস আদের। চিকিত্সা, প্রযুক্তি এবং কৃষিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে সম্ভাবনার কথা হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক হাঙ্গেরির অবদানের কথা স্মরণ করেন। হাঙ্গেরি ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে হাঙ্গেরির দূতাবাস ছিল। সে সময় দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন দ্বার উন্মোচিত হতে থাকলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এ সম্পর্ক আর বেশি দূর এগোয়নি। অন্যদিকে হাঙ্গেরিতেও দুই যুগ আগে সমাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। শহীদুল হক বলেন, দু’দেশের পুরনো সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। আগামীকাল দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে এবং বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি ডকুমেন্টেড হবে। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার সামিটের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সাসটেনেইবল ওয়ার্ল্ড সলিউশনস এক্সপো পরিদর্শন করেন। এই প্রদর্শনীতে যে নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের উন্নয়ন হচ্ছে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী দেখেন। একই সঙ্গে পানি শোধনের ক্ষেত্রে নতুন যে প্রযুক্তি আসতে যাচ্ছে, তাও দেখেন তিনি। পরে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ্ গারিব-ফাকিমের অনুরোধে তার সঙ্গে শেখ হাসিনার পানি সম্মেলন কেন্দ্রে একটি বৈঠক করেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। বৈঠকে ফাকিম তার দেশের বিভিন্ন শিল্পে বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এছাড়াও দু’দেশে দু’দেশের বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দুজনে আলোচনা করেন। শহীদুল হক বলেন, মরিশাসের তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের বেশ কিছু কর্মী ভালোভাবে কাজ করছেন। আমরা তুলনা করে দেখেছি, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। রাতে প্রধানমন্ত্রী তার সৌজন্যে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন। মঙ্গলবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সফরের তৃতীয় ও শেষ দিন বুধবার ‘হাঙ্গেরি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। হাঙ্গেরির জাতীয় বীরদের শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা : হাঙ্গেরি সফরের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে রাজধানী বুদাপেস্টের হিরোজ স্কোয়ারে ফুল দিয়ে দেশটির প্রয়াত জাতীয় নেতা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। হাঙ্গেরির গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা এবং সৈনিকসহ অজ্ঞাত শহীদদের স্মরণে বুদাপেস্ট শহরের কেন্দ্রে হিরোজ স্কোয়ার নির্মিত হয়েছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী কসুথ স্কোয়ারে যান। সেখানে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন করেন। |