রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা
Published : Tuesday, 29 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 941

মীর আবদুল আলীম : গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা নিরসনে নিরাপদ সমাজ শীর্ষক মতবিনিময় সভা চলছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত সভায় উপস্থিত থেকে অনেক কিছু জানলাম দেশের ৭৬ শতাংশ কিশোরী তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বলে বক্তব্যে উঠে এসেছে যার ফলে এখনও ৫০ শতাংশের বেশি কিশোরী

বাল্যবিবাহের শিকার হয় এসব নিয়েই আলোচনা চলছে সভা চলাকালে আমার অনলাইন নিউজ বাংলাদেশ ডটকমটি দেখছিলাম এক ফাঁকে একটি খবর যার শিরোনাম মা বললেন, আজ তোর বিয়ে, পাবনা ঈশ্বরদীর প্রনিধির পাঠানো সংবাদ চলতি সভার আলোচনার সাথে সংবাটির খুব মিল পেলাম সংবাদটি এমন- হঠাত্ দেখি বাড়িতে বরযাত্রী বুঝে উঠতে পারছিলাম না মা এসে বললেন, আজ তোর বিয়ে, সাজগোজ করে নে তবে বিয়েতে রাজি ছিলাম না কিন্তু আমার ইচ্ছার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে জোর করে ওরা আমাকে বিয়ে দিচ্ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে ২৭ নভেম্বর দুপুরে এভাবে বাল্যবিবাহ আয়োজনের কথা জানায় পাবনার ঈশ্বরদীর সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী সে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর দাখিল মাদরাসায় লেখাপড়া করে ওই ছাত্রীর বয়স ১৩ বছর তার পরিবারের ভাষ্যমতে মেয়েটিকে এলাকার বখাটেরা উত্ত্যক্ত করতো বাধ্য হয়েই তারা এ বিয়ের আয়োজন করে এই হচ্ছে আমাদের নারী ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতার যেন এক নমুনা এ অবস্থায় নারীর নির্যাতন এবং বাল্য বিয়ে রোধের বিকল্প নেই

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে সরকারের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে

রমনা পার্কে হাঁটতে গেলে মাঝে মাঝে এক বাউল শিল্পী এসে গান শোনায় বাউলদের ভাষাগত অশুদ্ধতা থাকলেও এর ভাবার্থ থাকে অনেক তাই ওদের গান আমার বেশ পছন্দের এ গানে বাঙ্গালিয়ানা ভাব থাকে নিজেকে গাঁয়ের মানুষ মনে হয়; মাটির মানুষ মনে হয় রাজধানীর ইটপাথুরে মানুষেভাব চলে যায় তাই বাউলদেরও গান শুনি সে দিনের গানের কলি এমন- দেশে ভাইরে নির্যাতিত শিশু, কিশোরী-যুবতী দেখার নাইরে কেউ এই হলো দুর্গতি প্রেসক্লাবের আলোচনায় অতিথিদের মধ্যে যারা নারীর প্রতি সহিংসতা কমেছে বলে গর্বের সাথে বক্তব্য দিলো কিন্তু সে কথা আমরা মানতে রাজি না প্রতি দিনের পত্রিকার যৌন নির্যাতনের সংবাদ দেখলে বাস্তব চিত্র ভিন্নই মনে হয় সারা দেশে নিত্যই এভাবে নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তো ঘটছেই যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে থাকছে না বয়স বা স্থান-কাল-পাত্র ভেদ যৌন নির্যাতন করছে কলেজ শিক্ষক, ডাক্তার, আত্মীয়, ইত্যাদি কেউ বাদ যাচ্ছে না ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া ও গৃহবধূ রাস্তাঘাটে, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এ পৈশাচিক ঘটনা কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয় ভাবি আমাদের নারীরা কবে নিরাপদ হবে? দেশে ধর্ষণ! ধর্ষণের পর খুন! এ জাতিয় যৌন-ব্যভিচার কি বন্ধ হবে না? কতিপয় মানুষরূপী নরপশুরা সভ্যতার ভাবধারাকে পাল্টে দিতে কি হায়েনার নখ মেলেছে? ঘৃণিত এই কাজ অপরাধবিজ্ঞানের কোন সংজ্ঞায় ফেলা যাবে? শুধু ধর্ষণই নয়, দেশে ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে এ জাতীয় অপরাধ বাড়বে, এটি অবধারিত নারীর প্রতি ব্যভিচার শুধু নারীর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ বিশ্বের যেসব দেশে ধর্ষণ বাড়ছে, দেখা যাচ্ছে অপরাধীর সাজা না হওয়া তার অন্যতম প্রধান কারণ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তরাই বেশি যারা উচ্চবিত্ত, সমাজের ওপর তলার মানুষ এ জাতীয় বিপদ তাদের ছুঁতে পারে কম যারা নিম্ন কাতারের বাসিন্দা তাদের অনেকেই ভয়ে চুপ থাকেন ইজ্জত হারিয়েও মুখ খোলেন না তারা জানেন, আইন আদালত করলে তাদের ভাগ্যে উল্টো বিপত্তি ঘটবে

অন্যায় করেও অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে সাধারণত অপরাধ বেড়ে যায় আসলে দেশপ্রেম, সততা, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব আমাদের অন্ধ করে ফেলেছে তাই সমাজ থেকে সুখ, শান্তি বা আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশর্ত ভালোবাসা বা ভক্তি কমে যাওয়ার কারণে আমাদের গঠনমূলক মনোভাব বা সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হচ্ছে এ কারণে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধার পরিবর্তে আমাদের ভোগের মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে একাধিকবার চলন্ত বাসের ভেতর নারীর ওপর গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতিবাদ জানিয়েছে

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মতো সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অধিকাংশই এখনও তাদের ওপর নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার কথা প্রকাশ করতে চান না তাই কারণ যারা এর শিকার হন তারা সবাই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে তাই সঠিক বিচারও এরা পেতে পারে না তবে মেয়েদের প্রতি পদেই বিপদের মোকাবিলা করতে হয় আজকের সমাজে শ্রেণিবিভাগ ব্যতিরেকেই

আসল সমস্যাটা হলো কুরুচিপূর্ণ পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটা কোনো শ্রেণিভাগ মানে বলে মনে হয় না এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতাও এই মানসিকতা বদলাতে পারে না তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে শিক্ষকের হাতে ছাত্রী, ডাক্তারের হাতে রোগী কিংবা নার্স ধর্ষিত হয় কি করে? যৌন-ব্যভিচার সর্বযুগে, সর্ব ধর্ম মতে নিন্দনীয় নিকৃষ্ট পাপাচার

ধর্ষণের শাস্তিও কঠোর অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে নিশ্চিত হলে হত্যাকারীর শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড কিন্তু এ যাবত্ যতগুলো ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার যথাযথ বিচার সম্পন্ন হয়েছে এ রূপ নজির কমই আছে হয় চূড়ান্ত রিপোর্ট নয়তো সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রভাবিত করে অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে ঠিকই উপরন্তু এর বিচার চাইতে গিয়ে বিচারপ্রার্থীরা নির্বিচারে পাল্টা হুমকি; কখনো কখনো হত্যার শিকার ও হয়রানির শিকার হন এ অবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে

১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিশেষ বিধান আইন করা হয় পর্যায়ক্রমে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করা হয় ২০০৩ সালে এ আইন আবার সংশোধন করা হয় ধর্ষণের শাস্তি কত ভয়ানক, তা অনেকেই জানেন না

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ ধারায় ধর্ষণের বিচার হয় এ আইনে ধর্ষণের সর্বনিম্ন শাস্তি- পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এছাড়া অর্থদণ্ড ও দিতে হবে ৯(২) উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ-পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে উপধারা ৯(৩)-এ বলা হয়েছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করে, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে ও এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিতও হবে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এছাড়া অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে দেশে ধর্ষণের পাকাপোক্ত আইন আছে ঠিকই কিন্তু আইনকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না প্রশ্ন হলো কজন অপরাধীর এমন সাজা হচ্ছে আইনের ফাঁক-ফোকরে পাড়পাচ্ছে অপরাধীরা যার কারণে নারীর প্রতি হয়রানি কমছে না আমরা মনে করি, আইনের যারা প্রয়োগ করবেন তারা ওই আইনের পথে হাঁটেন না কখনো অর্থের লোভ কখনো বা হুমকি-ধমকিতে শুরুতেই গলদ দেখা দেয় মামলার চার্জশিট গঠনের সময় ফাঁক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft