শিরোনাম: |
কুষ্টিয়ার ইটভাটাগুলোয় অবাধে পুড়ছে কাঠ
|
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ইটভাটাগুলোয় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এসব বন্ধে প্রশাসনের তেমন জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় ভাটাগুলোয় কাঠ পোড়ানোর একরকম মহোত্সব শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, জেলায় আবাদি কৃষি জমি সংলগ্ন মাঠে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩২টি ড্রাম চিমনির অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার টিনের ব্যারেলের তৈরি ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটাগুলোর কারণে একদিকে জেলায় কৃষি জমি ও আবাদি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে মূল্যবান বনসম্পদ। বেআইনি এসব ইটভাটা বন্ধে এ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে কাঠ পোড়ানো বন্ধে ভাটায় মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে যত্সামান্য জরিমানা আদায় করা হয়। ১২০ ফুট উচ্চতার পাকা চিমনির ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, লাইসেন্সবিহীন ড্রাম চিমনির ইটভাটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় মোট ১৩৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২০ উচ্চতার পাকা ফিক্সড চিমনির ৮৭টি, জিগ-জ্যাগ কিলন ১৮টি ও ২৬টি ড্রাম চিমনির ইটভাটা। এসব ভাটার বেশিরভাগ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। অবৈধ ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া ও ছাই থেকে আবাদি জমির ফসল, পরিবেশ ও জন-জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, প্রতিবছর এসব ভাটায় ৬৪ লাখ ৩২ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব কাঠ সংগ্রহ করা হয় কুষ্টিয়াসহ আশপাশের ৫ জেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে। অধিকাংশ ভাটাই গড়ে উঠেছে আবাদি জমিতে। এ ছাড়া আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নেয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ১৯৮৯ সালে ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫-এর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবাসিক এলাকা, বন ও ফলের বাগান থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। ভাটায় জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো যাবে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. হায়াত মাহমুদ জানান, জেলায় ১০০টি ভাটা আবাদি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভাটা আবাসিক এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে এবং আবাদি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব উপজেলায় ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠ বেশি ব্যবহার করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক জানান, জ্বালানি কাঠ সহজেই পাওয়া যায়। এ কারণে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। ইটভাটা মালিক মন্টু জানান, তারা ভ্যাট দেয়ার পর সরকারের অনুমতি নিয়েই এসব ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কৃষকদের জমির মাটি কাটা ও কাঠ পোড়ানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কোনো কাঠ ব্যবহার হয় না কিংবা কৃষকদের জমির মাটি কাটা হয় না। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল মওলা জানান, জমির উপরিভাগের ছয়-সাত ইঞ্চিতে ফসল উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বেশি থাকে। উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, দস্তা, কপার, ম্যাগনেসিয়ামসহ ১৭ ধরনের উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘাটতি পূরণে ৮-১০ বছর লেগে যায়। তিনি বলেন, জমির উপরিভাগ কেটে ফেলার কারণে উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। উপরিভাগের নয় ইঞ্চি থেকে এক ফুট পর্যন্ত উদ্ভিদের খাদ্যকণা থাকে। এটা কেটে ফেলার কারণে জমিতে আবাদ করা উদ্ভিদের শেকড় পর্যাপ্ত খাদ্যকণা না পাওয়ায় ওই জমিতে ফসল খুব একটা ভালো হয় না। স্থানীয় কয়েকজন ভাটামালিক জানান, একটি ভাটায় প্রতি মওসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট পোড়াতে গড়ে ৪৮ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ প্রয়োজন হয়। এসব কাঠ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মৌসুমে একটি ভাটায় ইট তৈরির জন্য তিন লাখ ঘনফুট মাটি ব্যবহার করা হয়। প্রতি মৌসুমে একটি ভাটায় তিন শ্রেণির ২৫ লাখ ইট তৈরি হয়। জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র রসায়নবিদ মিজানুর রহমান বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদের লাইসেন্স এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকায় ইট ভাটায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়াও সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি ব্যবহারের অপরাধে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। |