রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আমলনামা নিয়ে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের দৌড় ঝাপ
Published : Thursday, 17 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 852

এম.উমর ফারুকঃ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হতে বাকী আছে দশ দিন। এরইমধ্যে নতুন কমিটিতে কাঙ্খিত পদ পাওয়ার আশায় নিজের আমলনামা নিয়ে দোড়ঝাপ শুরু করেছে ছাত্রনেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ও সাবেক ছাত্রনেতাদের বাসায় প্রতিদিন হাজিরা দিচ্ছেন তারা। এমনকী বিএনপির সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত লন্ডনে চিকিত্সাধীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসারও বিশেষ কৌশল নিচ্ছেন সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশীরা।

সিন্ডিকেট নির্ভর ওইসকল ছাত্রনেতারা ইতিমধ্যে কারাগারে আটক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সাথেও কয়েকদফা দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। তবে নতুন কমিটিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে মুল্যায়ন না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। খোজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছর মেয়াদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ১৪ তারিখে। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এরপর চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। কিন্তু ২০১৫ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫৩ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রনেতা সক্রিয় ছিলেন। এর বাইরে পদ-পদবী বিহীন অনেক ছাত্রনেতার ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সংগঠনের নেতৃত্ব বাছাইয়ে এই দলের কিছু ভাইয়া গ্রুপ সরাসরি হস্তক্ষেপ করে থাকেন বলে বিগত দিনে অনেক ত্যাগীদেরকেই মূল্যায়ন করা যায়নি। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে তারা আশা করছেন না। তারপরও রাজনীতির আকাংখায় তারা নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় নামেন।

ছিটকে পড়েন আবার ঘুরে দাড়ান। একসময়ে হারিয়ে যান। এভাবেই চলছে প্রতিটি কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে। সুত্রমতে, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর পরই দির্ঘ তিন মাসের আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে চলে আসে এই সংগঠন। বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে গেছে। এজন্য চরম মূল্যও দিতে হয়েছে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী নিহত, আহত কিংবা পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে। সেই সাথে গুমের শিকার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী। আন্দোলনের ওই ধাক্কার কারনে সংগঠন গোছানোর সময়ও তেমন পাননি। তবে এই সময়ের মধ্যে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি, হল কমিটি, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, মহানগর কমিটি ঘোষণা করেন।

এছাড়া সারাদেশের শতভাগ মেয়াদোত্তীর্ন জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে প্রায় চল্লিশটি কমিটি বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সূত্র জানায়। সুত্রটি আরো জানায়, কেন্দ্রীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কোন সমন্বয় বৈঠক করেনি। কমিটি গঠনে সভাপতি আর সাধারন সম্পাদক সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিলো। জেলা কমিটি গঠনে বিগত দিনের মতো কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়ে কোন টিম গঠন করা হয়নি। ফলে এই সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অলঙ্কার হিসেবেই অনেকটা শোভা বর্ধন করেছে বিগত দিনে। এসব বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান জানান, প্রায় দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও ছাত্রদলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা আর নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা থেকেই প্রমাণ হয়- আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।

বিগত দিনে এই সংগঠনের উপর দিয়ে নির্যাতনের যে ঝড় বয়ে গেছে তারপরও আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান বিচক্ষন নেতা হিসেবে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের মাঝে স্থান করে নিয়েছেন। অনেকের মতো আর্থিক কেলেঙ্কারীসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজের সাথে তার নাম উঠে আসেনি। সাধারন সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু বিগত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তার যোগ্যতা প্রমান করেছেন। একইভাবে সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুনের ক্ষেত্রেও। সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার আন্দোলনের মাঠেই সময় ব্যয় করেছেন।

এছাড়া সংগঠনের শীর্ষ পদ পেতে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন সহ সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান। ২৭তম বিসিএস ক্যাডার হয়েও রাজনীতির কারনে বিগত দিনে মাঠ চষে  বেড়িয়েছেন। ছাত্রদলের মধ্যে সর্বাধিক ৮২টি মামলা রয়েছে এই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। সবগুলোই আন্দোলনকেন্দ্রীক। আন্দোলনের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সকল ক্ষেত্রেই ছিলো তার সমান বিচরন। সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ সহ সভাপতি নাজমুল হাসান। শক্তিশালি সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে বিগত দিনের আন্দোলনে কাজ করেছেন। আন্দোলন ছাড়াও তিনি দলের জন্য বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে জড়িয়ে নিজের নাম আলোচনায় রেখেছেন।

রাজধানীর প্রায় সকল আন্দোলনেই জড়িয়ে রয়েছেন সহ সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির। নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলনের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান কাজে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। দক্ষ সাংগঠনিক ছাত্রনেতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সহ সভাপতি আবু আতিক আল হাসান মিন্টু। বিগত আন্দোলনে ফেসবুক নির্ভর রাজনীতি কিংবা ভাইয়া গ্রুপের তল্পিবাহকের রাজনীতির বাইরে থেকে এককভাবে কাজ করেছেন তিনি। এর বাইরেও সহ সভাপতি আলোচনায় রয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনির, মামুন বিল্লাহ।  অপরদিকে যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে নেতৃত্বের আলোচনায় রয়েছেন, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

আন্দোলনের মাঠে তেমন ভূমিকা না থাকলেও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছেন। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকে ফিরে আসা মফিজুল ইসলাম আশিক তিন মাসের মতো ছিলেন গুমের তালিকায়। এর বাইরে ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ, মিজানুর রহমান সোহাগ, কাজি মোখতার হোসাইন, সামছুল আলম রানা, হাসানুল বান্না, মির্জা ইয়াসিন আলী, মেহবুব মাসুম শান্ত সহ অনেকেই আন্দোলনে ভূমিকার কারনে রয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্বের তালিকায়।

দলে ভাইয়া গ্রুপের আশীর্বাদ ছাড়াই আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর। এর বাইরে সম্পাদকীয় পর্যায়ের মেরাজ আজিজ, আরাফাত বিল্লাহ, সৈয়দ মাহমুদ, খালেদ মাহমুদ মাসুদ, হাসানুল বান্না প্রমুখ। অপর একটি সুত্র জানায়, নতুন কমিটিতে যোগ্য নেতাদের স্থান দিতে বিভিন্ন কৌশলে যাচাই বাচাই হবে। কারন আগামীদিনের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলকে সামনের সারিতে থাকতে হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft