সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মালয়েশিয়াতেও তছনছ বিএনপি
Published : Thursday, 17 November, 2016 at 6:00 AM, Update: 17.11.2016 8:14:52 AM, Count : 902

এম. উমর ফারুকঃ মালয়েশিয়া বিএনপির মধেও গ্রুপিংয়ে চলছে কোন্দল। দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। কোণঠাসা করা হচ্ছে ত্যাগী নেতাদের। বহিষ্কার করা হচ্ছে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের নেতাকর্মীদের। এ অভিযোগ জানিয়েছেন মালয়েশিয়া বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও সমান দক্ষতা দেখানোর পুরস্কারস্বরূপ মালয়েশিয়া কমিটিতে স্থান পাকাপোক্ত করা হয়েছে বলে আরেক অংশের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়া নেতাকর্মীদের  এক গ্রুপের সভাপতি বাদুলুর রহমান (কেন্দ্র থেকে ঘোষিত) ও অন্য গ্রুপের শহিদুল্লাহ শহিদের নেতাকর্মীদের মাঝে বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কার করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। সভাপতি বাদলুর রহমানকে বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য করায় নতুন করে  জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাদলের পক্ষেও রাজনীতি দুষ্কর হয়ে উঠেছে বলে ওই গ্রুপের নেতাকর্মীরা জানান।

সূত্র মতে, বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মালয়েশিয়া বিএনপির এক গ্রুপের সভাপতি শহিদুল্লাহ শহিদকে শোকজ ছাড়াই কেন্দ্র থেকে বহিস্কার করা হয়। এর প্রতিবাদে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রাদেশিক কমিটির নেতা কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মালয়েশিয়া বিএনপি নেতা শহিদউল্লাহ শহিদের কাছ থেকে কয়েক দফা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এমন সংবাদ মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ার পরই শহিদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে শোকজ না করে, তার কাছে ব্যাখ্যা দাবি না করে, ঘটনার তদন্ত না করে ওই কেন্দ্রীয় নেতার একক ক্ষমতাবলে শহিদকে বহিষ্কার করা হয় বলে অভিযোগ করেন শহীদ গ্রুপের নেতারা।

সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বিএনপি ও চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর এই দেশে দলের কর্যক্রম বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয়। এরপর ছাত্রদল থেকে উঠে আসা প্রবাসী নেতা শহিদউল্লাহ শহিদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তত্কালীন দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার কাছে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে জমা দেয়া হয়। এরপর তার মৌখিক নির্দেশে ও পরামর্শে এ দেশে দলের কার্যক্রম জোরদার করা হয়। এরপর সৃষ্ট ওয়ান ইলেভেনে দলের বিপর্যয় ঘটে এবং এরপরের ঘটনাগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই কমিটি। বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যানারে সোচ্চার অবস্থান নেয় বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতি।

ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়েও কমিটি গঠন করে দলের বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেয়া হয়। তিনিও এই কমিটিকে গ্রহণ করেন। এছাড়া বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও কমিটির নেতাদেরকে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের নির্দেশনায় মালয়েশিয়া বিএনপি ইফতার পার্টি, জিয়া পরিবারের সদস্য আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর দোয়া মিলাদ, বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর জন্য দোয়া মিলাদ, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুদিবস, খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হমালার প্রতিবাদ সভা, নিখোঁজ সালাউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রতিবাদ সভাসহ অসংখ্য কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এই কমিটির বাধ সাধে ২০১৬ সালের কাউন্সিল শেষে।

শহিদুল্লাহর কমিটির অজ্ঞাতসারে নতুন আরেক কমিটির উদ্ভব ঘটে মালয়েশিয়া বিএনপিতে। যার সভাপতির নেতৃত্বে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান। আওয়ামী লীগ ঘরানার হিসেবে পরিচিত এই নেতার বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা সদরের সাতুটিয়া গ্রামে। বাবা হামিদুর রহমান ছিলেন দলিল লেখক। রাজশাহীর বিআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন বাদল। সেই সুবাদে সম্পর্ক গড়ে তোলেন রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় ও তার যোগাযোগ রয়েছে। কথিত রয়েছে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে বাদল সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক জ্যেষ্ঠ সংবাদ কর্মীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খারাপ স্ট্যাটাস দিয়েও সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন তিনি।

এদিকে ছাত্রজীবনে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যোগ দেন বিএনপিতে। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলার বিতর্কিত খান পরিবারসহ এই জেলার আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতার কমতি ঘটেনি কখনো। এখনও তিনি খান পরিবারকে সুরক্ষা দিচ্ছেন বলে এলাকা সূত্র নিশ্চিত করেছেন। টাঙ্গাইলের আলোচিত ফারুক হত্যার অন্যতম আসামি জাহিদুর রহমান কাকনকে মালয়েশিয়ায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আদম ব্যবসার নামে সর্বহারা করেছেন সাধারণ মানুষদের। এ নিয়ে মালয়েশিয়াতেই মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মালয়েশিয়া মামলা নং ৩১৭১ তারিখ ১৭ মে ২০০৩।
তবে ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপটে বাদলুর রহমানেরও অনেক অংশগ্রহণ ছিল। তিনিও নিজ গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এমনটা স্বীকার করেছেন উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

এই গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ায় মালয়েশিয়ায় চমক সৃষ্টি করেছেন। তার এই পদায়ন নিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মতে, ছাত্রদল থেকে উঠে আসা ত্যাগী আর পরিক্ষীত নেতাকর্মী রয়েছে মালয়েশিয়া বিএনপিতে। যাদের অবস্থান ও কার্যক্রম পর্যালোচনায় নেয়া হলে মূল্যায়নের হিসেব পরিবর্তন হতো। কিন্তু দলের এককেন্দ্রীক সুবিধা প্রদানের কারণে মোশারফরা সবসময়ই সুবিধা পেয়ে থাকেন।

মালয়েশিয়া বিএনপির একাংশের সহ-সভাপতি পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিদেশে মালয়েশিয়া বিএনপি সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা চাই এখানে উভয় গ্রুপ মিলেমিশে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করুক যাতে আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। মালয়েশিয়া বিএনপিকে সু-সংগঠিত করার জন্য মো. শহিদুল্লাহ শহিদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে কমিটি ঘোষণা করলে মালয়েশিয়া বিএনপিতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। অপর দিকে বাদলুর রহমানও শিক্ষিত নেতা। তাই তাকেও যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত।

এসব বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কোন্দলের বিষয়ে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সাথে এবং তার আগের রাজনীতির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এর বাইরে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft