তারেক পাঠান, নরসিংদী প্রতিনিধি : বদলীজনিত কারণে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বিদায় নিলেন নরসিংদী সদর উপজেলার জনবান্ধব সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহ্ আলম মিয়া। ২৫ জুলাই রোববার স্বাস্থ্য বিধি আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে বিদায় দেওয়া হয়। শাহ আলম মিয়া ৩৪ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন সদস্য। ২০১৯ সাল থেকে নরসিংদী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সম্প্রত্তি ফরিপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বদলি হয়েছেন মাঠ পর্যায়ে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা জনপ্রিয় এই কর্মকর্তা। সততা,দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে নরসিংদীবাসীর ভালবাসা জয় করে বিদায়লগ্নে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
বিশেষ করে সদর উপজেলার কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের প্রচুর পরিমাণ সরকারি খাস জমি উদ্ধার, মিসকসে (নামজারি জমাভাগ খারিজ সংক্রান্ত) মামলা শুনানির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি,ভূমি নিয়ে স্থানীয় বিরোধের অবসান, স্বচ্ছতার সাথে ভূমি সেবা প্রদান, সহজীকরণ,সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা,ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্তর ব্যবস্থা করাসহ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে সম্মুখসারীর করোনা যোদ্ধার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কুইক রেসপন্স টিমের আহবায়ক হিসেবে করোনায় মৃতব্যক্তিদের দাফন সৎকার করে জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ হতদরিদ্র গৃহহীন পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিমূর্হত তদারগী করে কাজের স্বচ্ছতা,টেকসই, মজবুত ও দুর্যোগসহনীয় গুনগতমান ঠিক রেখেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাধবদীতে ব্রহ্মপুত্র নদীর দুইপাড়ে সাত কিলোমিটার অংশে প্রায় সাড়ে পাঁচশত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ,ভেজালবিরোধী অভিযান,পরিবেশ রক্ষার অভিযান, অবৈধ বালু উত্তোলন বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং প্রতিরোধে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, জেলা প্রশাসনের অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। এসিল্যান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি ভূমি অফিসে স্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। করেনাকালে জনসচেতনতা বৃদ্ধি,সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করন, করোনায় মৃতব্যক্তিদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফন ও সৎকারসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। নরসিংদী ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড.মশিউর রহমান মৃধা জানান, এসিল্যান্ড শাহ্ আলম মিয়া অত্যন্ত মেধাবী ও গতিশীল নেতৃত্বের অধিকারী। ভূমি ডিজিটাইজেশন থেকে শুরু করে করোনকালে সরকারের ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নও সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে দিনরাত এক করে কাজ করেছেন তিনি। মাঠ পর্যায়ে ওনার কর্মকান্ড অতুলনীয়।
গণকন্ঠ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম জানান, শাহ্ আলম মিয়া নরসিংদী বাসীকে হৃদয় থেকে ভালবেসে সকলের কাছে একজন ভাল ও উচ্চ মনের মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নরসিংদী সদরকে তিনি যেভাবে শৃঙ্খলায় রেখেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন পাঠাগারের সভাপতি শাহীনুর মিয়া জানান, করোনাকালে সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।ওনার কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ সাথে  প্রশাসনের দূরত্ব অনেকটা কমে গেছে  ।
নরসিংদীর সচেতন মহল মনে করছেন,মাঠ পর্যায়ে একজন সৎ ,দক্ষ,পরিশ্রমি ও পরোপকারি মানুষ এসিল্যান্ড শাহ্ আল মিয়া। তিনি সততা দিয়ে জেলাবাসীর ভালবাসা জয় করেছেন। শাহ্ আলম  চলে গেলেও তার কর্মকান্ড থেকে যাবে নরসিংদীবাসীর হৃদয়ে। সাধারণ মানুষের সাথে প্রশাসনের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছেন এসিল্যান্ড শাহ্ আলম মিয়া। তিনি নরসিংদীবাসীর মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী কাজের জন্য পেয়েছেন অনেক পুরষ্কার। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ডের সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে। বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী  ফরহাদ হোসেনের ভার্চুয়াল উপস্থিতে এই পদক গ্রহণ করেন তিনি। একই বছরের ২৩ আগস্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের জন্য জেলা প্রশাসন নরসিংদীর কাছ দেওয়া হয় জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ডের সম্মাননা। ২০১৯ সালে সততা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতায় অবদানের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরুষ্কার ও স্বচ্ছ সেবা প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২০১৮ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার পুরষ্কার পান এসিল্যান্ড শাহ্ আলম মিয়া।
অফিস সূত্রে জানা যায়, মো: শাহ্ আলম মিয়া নরসিংদী সদর উপজেলার ৩৫ তম সহকারী কমিশনার (ভূমির) দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম নরসিংদী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করেন তিনি। পরবর্তিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালে পদোন্নতি পেয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে । তিনি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।